Tag Archives: সিলেট

শিক্ষিত মূর্খ মাহফুজুর রহমানের দেখা উচিত সিলেটের শিক্ষা-দীক্ষার ইতিহাস কতো পুরনো।

আদর্শ পোস্ট ফরম্যাট


বৃহত্তর সিলেটের চার জেলায় বন্ধ হয়ে গেছে এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ এর সম্প্রচার। লন্ডনে প্রেস কনফারেন্সে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান সিলেটের মানুষদের নিয়ে কটুক্তি করার প্রেক্ষিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মাহফুজ প্রেস কনফারেন্সে বলেছে, আপনারা সিলেটিরা পড়াশোনা করে ভদ্র হয়ে গেছেন।

টাকা দিয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি কেনা এই মাহফুজের জ্ঞানের পরিধি যে কতোটা সীমিত তা নিচের লেখাগুলো পড়লে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

দেশের এক প্রান্তে অবস্থিত বৃহত্তর সিলেটের শিক্ষা-দীক্ষার ঐতিহ্য অধুনাকালের নয়। অতি প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলের মানুষ পড়াশোনা করেছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেট শিক্ষাক্ষেত্রে ছিলো অগ্রসর জনপদ।

পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের ১৭টি জেলার মধ্যে ১৬টি জেলারই ডিসি ছিলেন সিলেটি। সারা পাকিস্তানের শিক্ষার হার ছিলো ১৭ ভাগ অথচ এর বিপরীতে সিলেটের শিক্ষার হার ছিলো ২৪ ভাগ। ব্রতচারী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ত্ব ব্রিটিশ আমলের আইসিএস অফিসার গুরুসদয় দত্ত ছিলেন সিলেটের সন্তান। এই সিলেটেরই সন্তান সৈয়দ মুজতবা আলী, মঞ্জুশ্রী চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অধ্যাপক ড. জিসি দেব, বিখ্যাত ঐতিহাসিক নিহার রঞ্জন রায়,আসাম সরকারের শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল মজিদ (কাপ্তান মিয়া), কর্ণেল এম এ জি ওসমানি, সাবেক স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, দেশের প্রথম সারির অর্থনীতিবীদ সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এই সিলেটেরই সন্তান।

উইকির সাহায্য নিয়ে শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সিলেটের ঐতিহ্যের বিশালতা দেখে আসি।

সিলেট একটি প্রাচীন জনপদ। প্রাচীন কাল থেকে বহু ভাষাভাষী জাতি, বর্ণ নিয়ে বেড়ে উঠেছে বাংলাদেশের প্রান্তবর্তি এই জনপদ। সিলেটে প্রাপ্ত তাম্রশাসন, শিলালিপি, কাহিনী, গাঁথা ইত্যাদি এই অঞ্চলের ভাষা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন বলে ধারণা করা হয়[৪]। এই অঞ্চলে প্রাচীন কাল থেকে অস্ট্রেলীয়, মঙ্গোলীয় প্রভৃতি সম্প্রদায়ের বসবাস, যার ফলে ভাষার বেলায়ও রয়েছে বৈচিত্র্য। বলা হয়, আর্যদের দ্বারা যখন ভারতের মূল ভূখণ্ড অধিকৃত হয়, বৌদ্ধরা তখন স্থান পরিবর্তন করে সিলেটে এসে বসবাস শুরু করে। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আসদ্দর আলী সহ আরো অনেক গুনী জনেরা লিখেন খ্রিস্টের জন্মের অনেক পূর্বে সিলেট বৌদ্ধদের তীর্থে পরিণত হয়ে ছিল। যার ফলে সপ্তম শতাব্দীতে রচিত বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণের চর্যাপদে সিলেটের মানুষের কথ্য ভাষার অনেকটা মিল রয়েছে বলে জানা যায়[৪৪][৪৫]। ডঃ আহমদ শরিফ সহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের মতে সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার চর্যাপদের ভাষার সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রটি আজও অক্ষুন্ন আছে। উদাহরণ স্বরুপঃ- চর্যাপদে ব্যবহূত হাকম (সেতু) উভাও (দাঁড়াও) মাত (কথা) ইত্যাদি [৮]। অতঃপর খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দিতে সিলেটে সংস্কৃত মিশ্রিত বাংলা লিপির বিকল্প লিপি হিসেবে সিলেটি নাগরী নামে একটি লিপি বা বর্ণমালার উদ্ভাবন হয়। সিলেটি নাগরী লিপি এবং এ লিপিতে রচিত সাহিত্যকে (সিলেটি) বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন স্বরুপ গণ্য করা হয়। উল্লেখ্য, সিলেটি নাগরী লিপিতে রচিত সাহিত্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এযাবৎ ডক্টরেট করেছে ডঃ গোলাম কাদির, ডঃ আব্দুল মছব্বির ভুঁইয়া ও ডঃ মোহাম্মদ সাদিক[৪]। সুলতানী আমলে সিলেটের মরমী কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে নাগরী লিপির ব্যবহার যদিও খুব বেশী ছিল। বর্তমানে তা একেবারে হাড়িয়ে যায়নি। এ লিপিতে রচিত হালতুন নবী পুথিঁকেই সিলেটের শ্রেষ্ট কাব্য সমুহের অন্যতম মনে করা হয়[৪]। সৈয়দ মোস্তফা কামলের মতে সিলেট বিভাগের অধিবাসীরা সাহিত্য চর্চায় বাংলাদেশের পথিকৃৎ। এ বিভাগের অধিবাসীরা বাংলা ভাষা ও সিলেটি নাগরী ভাষা সহ মোট সাতটি ভাষায় সাহিত্য চর্চার ঐতিহ্য রেখেছেন। পনের’শ শতাব্দি শুরু থেকে এ যাবৎ সিলেটবাসীরা যে সমস্ত ভাষায় সাহিত্য রচনা করে গেছেন, সেগুলো হলো-(১) সংস্কৃত (২) বাংলা (৩) সিলেটি নাগরী (৪) আরবী (৫) ফার্সী (৬) উর্দু ও (৭) ইংরেজি।[৪] উদাহরণ স্বরুপ বিভিন্ন ভাষায় রচিত সিলেট গীতিকায় অন্তর্ভূক্ত সিলেট অঞ্চলের লোক সাহিত্যকে বুঝানো হয়।

প্রখ্যাত সাহিত্য গবেষক অধ্যাপক আসদ্দর আলী, সৈয়দ মুর্তাজা আলী প্রমুখ গণের মতে মধ্য যুগে সিলেটি নাগরী, আরবী ও ফার্সী ভাষা ছিল সিলেটের অধিবাসীর অন্যতম অবলম্বন। উল্লেখিত ভাষায় রচিত কাব্য গ্রন্থ, ধর্মীয় কিতাব, গীত-গাঁথা, ডাক-ডিঠান ইত্যাদি সিলেটের সাহিত্য ভাণ্ডারকে সম্মৃদ্ধ করেছে। বলা হয়, আধুনা যুগে যদিও ঐ সব ভাষার একক প্রচলন নাই, তবে বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারে আরবী, ফার্সী উর্দু ইত্যাদি ভাষার সংমিশ্রণ রয়েছে [৪][৮]। বর্তমান যুগে সিলেটের অধিবাসী সকলেই বাংলা ভাষায় লেখাপড়া করছেন এবং আঞ্চলিক ভাবে প্রায় সকলেই সিলেটি ভাষায় কথা বলেন।

শিক্ষা

বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণরাই এককভাবে হিন্দু সমাজের শিক্ষা গুরু হিসেবে বিবেচিত হতেন। ভাটেরায় প্রাপ্ত তাম্রফলকের বিশেষ বিবরণে রাজকীয় শিক্ষা প্রসার ও যজ্ঞ উপলক্ষ্যে মিথিলা ও কৌনুজ হতে সিলেট অঞ্চলে ব্রাহ্মণ আনয়নের উল্লেখ পাওয়া যায়।[২] তখনকার সময়ে সিলেট অঞ্চলের পঞ্চখণ্ড, রাজনগর, গোলাপগঞ্জ প্রভৃতি স্থানে টোল ও চতুষ্পাঠীতে ছাত্ররা গুরুগৃহে শিক্ষা নিত। উল্লেখিত টোল জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণ করে সিলেট হতে যারা ভারতবর্ষে সুনাম অর্জন করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম পণ্ডিত রঘুনাথ শিরোমনি। উপমহাদেশের বিখ্যাত জ্ঞানপীঠ নবদ্বীপ পর্যন্ত রঘুনাথ শিরোমনি প্রসিদ্ধ ছিলেন বলে উল্লেখ পাওয়া যায় [২]। শিক্ষা বিষয়ে তত্কালে নবদ্বীপে সিলেটিদের নিয়ে একটি প্রবাদবাক্য প্রচলিত ছিল বলে বলা হয়, শ্রীহট্টে মধ্যমা নাস্তি অর্থ সিলেটের লোক হয় উত্তম, নয় অধম, মধ্যম নেই। বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রীচৈতন্যের পিতা জগন্নাথ সহ আরো অসংখ্য পণ্ডিতজনের এই অঞ্চলে জন্ম হয়।[৮] অতপর হিন্দু বৌদ্ধ যুগের পরে মুসলিম যুগেও সিলেট অঞ্চলে শিক্ষার প্রসার ঘটে। সুফী, দরবেশ ও মাশায়েখগণ যখন সিলেট আসেন তখন ভক্ত অনুরুক্তদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছিয়ে দিতে খানকা প্রতিষ্ঠিত করেন। পরবর্তীকালে ঐ খানকাগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর হয় বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। তখন শুধু সংস্কৃত নয় উর্দু, পারসী ও আরবী ভাষায় বিদ্বান হয়েছেন অনেক। বিদ্বানদের মধ্যে যাঁরা শিক্ষা প্রসারের কাজে করে স্থাপনা, সাহিত্য চর্চাসহ বিভিন্নভাবে জায়গা জমি দিয়ে সহযোগিতা দান করে গেছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য মধ্য যুগের মহাকবি সৈয়দ সুলতান, সৈয়দ মুসা, শেখ চান্দ, সৈয়দ শাহনুর, কবি প্যারিচরণ, গীরিশ চন্দ্র নাগ, গৌরিশংকর, লীলা নাগ, সৈয়দ মুর্তাজা আলী, অধ্যাপক আসদ্দর আলী, অধ্যাপক আজফর আলী, দেওয়ান হাসন রাজা, শেখ ভানু, শিতালং শাহ, আসিম শাহ, রাধা মাধব দত্ত, রাধা রমন দত্ত, শাহ ইস্কন্দর মিয়া, ডঃ সুন্দরী মোহন, এম এ জি ওসমানী, গজনফর আলী, চৌধুরী গোলাম আকবর।[৮][২][৪][৪৬] উল্লেখিত ব্যক্তিদের যাদের প্রচেষ্টায় এ অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। এসবের মধ্যে, রাজনগর এম ই স্কুল (স্থাপিতঃ ১৮৬৬ইং) সিলেট মিশনারী এস ই স্কুল (স্থাপিতঃ ১৮৮৭ ইং) সুনামগঞ্জ জুবিলী হাই স্কুল (স্থাপিতঃ ১৮৮৭ইং) মৌলভীবাজার হাই স্কুল (স্থাপিতঃ ১৮৯১ইং) সুনামগঞ্জ দশরথ এম ই স্কুল (স্থাপিতঃ ১৮৯৬ইং) হবিগঞ্জ হাই স্কুল (স্থাপিতঃ ১৮৯৭ইং) সিলেট গার্লস স্কুল (স্থাপিতঃ ১৯০৩ইং) পাইল গাও ব্রজনাথ হাই স্কুল, জগন্নাথপুর (স্থাপিতঃ ১৯১৯ইং) ইত্যাদি। ১৮৬৭ সালে সিলেট বিভাগে স্কুলের সংখ্যা ছিল ২৮টি এবং ১৯০৫ সালে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯টিতে। যার মধ্যে বর্তমান মৌলভীবাজার জেলায় ১৩টি মাধ্যমিক, সুনামগঞ্জ জেলায় ১৩টি মাধ্যমিক, হবিগঞ্জ জেলায় ১৮টি মাধ্যমিক এবং সিলেট জেলায় ১৫টি মাধ্যমিক স্কুল ছিল । ১৮৬৫ সালে এই বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েট ছিলেন মোহাম্মদ দাইম এবং জয় গোবিন্